‘দুষ্পাঠ্য দুটি চোখ’ মৃত্যুকে
উত্তীর্ণ করে কবিতায় কবি বেঁচে থাকেন এমন কবিতাগ্রন্থ
✺ অরণ্য আপন
হরিপুরের
ছেলে কবি হয়েছেন─ এই
কথা হরিপুরের কাঁচা-পাকা ধানের মাঠ আর কলাগাছের গাও ঠেলে ওঠা আকাশ থেকে সারা বাংলার
আসমান-জমিনে সেই কথা খোদার রহমতের মতোই ছড়িয়ে গেছে। একজন সফল কবিই এভাবে বিকশিত হয়
পাতার কুচির মতো, রোদ ওঠা আকাশের মতো । কবি
আক্তারুজ্জামান লেবু সে-ই কবি যিনি হরিপুরে গ্রামে বসে কবিতা লিখে সারা বাংলায়
পাখির কলতানের মতো মুখরিত হয়ে গেছেন।
কবির
কোনও মৃত্যু নেই। একজন সফল কবিকে খোদাও মৃত্যু দিতে পারেন না। এটা যেমন খোদা জানেন, ঠিক একজন কবিও তা বেলিফুলের গন্ধের মতো সত্য জানেন। কবি আক্তারুজ্জামান
লেবু বলেন,
‘আমি তো
ভাই কবরের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস/
আমায় তুমি শেখাতে এসো
না লাশের দীর্ঘশ্বাস।’
কবির
শরীর ঝিমিয়ে গেলেও মনের ভিতর পাঠ করে চলছে এই জীবন। কবির এই ভাঙা জীবনের ঘ্রাণ তার
সমস্ত কবিতায় বোবা চোখের জলের মতো ঘুরতে থাকে। আমরা সেই ঘ্রাণের ঘোর সামলাতে পারি
না,
আমাদের মন ব্যথা হয়ে ওঠে। চোখ মুছলে জীবন পুড়ে যায়, চোখের এত জল নিয়েও মরার আগুন থেকে জীবনকে রক্ষা করতে পারি না। দাউদাউ
করে জ্বলে উঠছে আক্তারুজ্জামান লেবুর কবিতা।
‘একটি দীর্ঘশ্বাসের চিঠি পাঠালাম/
অবসরে
পড়িও/
আমার
ঠিকানাটা কাঁচের মতো/
সাবধানে
ধরিও।’
দীর্ঘশ্বাসের
চিঠি কি অবসরে পড়ার জিনিস? কবির এই ধাক্কা আমরা
কতটুকু সামলাতে পারি!
যখন
আমরা তার পাশে দাঁড়াতে পারছি না, তার কবিতার কাছে
মৃত্যু সরায়ে জীবন রাখতে পারছি না, এই বিজ্ঞানের বাহাদুরি,
সভ্যতার আড়ষ্ঠতা, পুঁজিবাদের জীবনপোড়া
গন্ধ দাঁত কেলিয়ে হাসে, কবি বলেন,
‘কি এমন
হলো/
আর সব অযোগ্য হয়ে গেল?’
কবি
আবার আক্ষেপের গান তার শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটে ধরলে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়...
‘কেমন আছি
জানতে চেয়ো না এসে/
আমার ভালো থাকা
সমুদ্রে গেছে ভেসে।’
নিজের
মৃত্যুর শোক নিজে করা বেশ কষ্টের। যদিও অনেক সময় ঘনকালো মেঘ করা আকাশ বৃষ্টি না দিয়েই শাদা ফকফকা হয়ে
যায়। চোখের নিচে কবর, পায়ে পায়ে বাড়ি খায়। আঙুলের ডগায় কবর শীতের মতো ফুলে ফুলে ওঠে। কবিকে
কুর্নিশ তবু তিনি জীবনে কবিতার গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটাচ্ছেন।
কবি
অসুস্থ। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তবু তার হাতে মাঠের সোনালি ফসলের মতো কবিতা
ধরা দিচ্ছে। কবি বেঁচে থাকতে চান, আমরা কি সেই কবিতার
হাত ধরতে পারি না?
‘এল্লে কতা কস না তো বাবা, মোর গা-পায়ের
ফেরেস্তা সরে যায়’
কবি
তার মাকে নিশ্চিত মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করাতে পারেননি, আমরাও বিশ্বাস করতে চাই না।
কবি আক্তারুজ্জামান লেবু’র স্মরণে অরণ্যনদী’র অনলাইন বিশেষ সংখ্যা
0 মন্তব্যসমূহ