সাম্প্রতিক প্রকাশিত

10/recent/ticker-posts

‘বকুলের পাপড়িতে ছাতিমের ঘ্রাণ’ কবিতাগ্রন্থ থেকে পাঁচটি কবিতা

‣ তৃণলতা কুরচি 

উদ্‌ভ্রান্ত চাঁদনি

নিশুতি রাতে আকাশ আজ
ঢাউস এক চাঁদ অর্পণ করেছে, বকুল
হায় রে, জ্যোৎস্নার কী-দোর্দণ্ড প্রতাপ!

কামড়ে দিচ্ছে চোখের ঝালর
মন-মস্তিষ্ক
অস্থিমজ্জা হাড়গোড়

উদ্‌ভ্রান্ত চাঁদনিপসর প্রহার,
শিবরঞ্জনী-বেহাগ জাগায়

ফোঁস-করে-ওঠা, ফণা-তোলা
জ্যোৎস্না-পীড়নে
পদনখ যেন খসে যেতে চায়
 

রাঁজহাসের ডুব

আজ অবিরাম বৃষ্টির বীণায় ঝুমঝুম রাগে
আকাশ গাইছে ‘একাত্তর হাজার দুইশ’-একুশ’

মেঘের মিলনে যতবার আকাশে জ্বলেছে বিদ্যুৎ
ততবার নয়নদিঘিতে, সাতশ’-তিরিশটা রাজহাঁস
আশ্লেষ-আলিঙ্গনের বৈধব্য নিয়ে ডুবে গেছে

ডুবে-যাওয়া দিঘির প্রতিটি জলকম্পনে
ধ্বনিত হয়েছে, বকুল বকুল!
 

এপার-ওপার

চল্লিশোর্ধ্ব হওয়ার আগে-আগে
বেহালাকে বশ মানাতে শিখব

দশ বছর তোমার চোখের জল কুড়াবে তার সুর

আয়ুর বছর সংখ্যা হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকলে
জমা-করা কুড়ানো সে-জল
ভিভিয়ান রিচার্ডসের ব্যাট হয়ে
আমার পরমায়ুর বলে ছক্কা মেরে দিলে
পৃথিবীর বাউন্ডারির বাইরে চলে যাব

সেইখানে সেঞ্চুরির বাকি পঞ্চাশে:
একটি কুঁড়িতে দু’টি সবুজপাতা ফলাতে
তন্নতন্ন খুঁজে নিয়ে বেহালার সুর
একমাত্র তুমিই ননস্ট্রাইকার হবে, বকুল

মহাবিশ্ব-ইতিহাসে
জন্মাবে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুগল-উল্কাফুল।
 

শঙ্খের খোলসে

কখনও-কখনও শঙ্খের খোলসে,
আঁকিবুঁকি করতে চায় সাগরের জল

রাতের নীরব যখন করে কুহুতান:
স্বপ্নের ভেতর শঙ্খে ধ্বনি তোলে সমুদ্র
অর্বাচীন চোখ বন্ধ, অক্ষিপট কেমন করে দ্যাখে
জীর্ণ বনের পথ ধরে ধুলোমলিন বাতাসে গায়ের গন্ধ
ছড়াতে-ছড়াতে বহুদূর হেঁটে
দৃশ্যের সীমানায় মিলিয়ে যাওয়া?

শীতের শন্-শন্ হাওয়ায় কেন মিশে যায়
আমার বাদলদিনের বকুলের ঘ্রাণ!

জানো বকুল, ‘একাত্তর হাজার দুইশ’-একুশ’ একটা
ক্যাকটাস হওয়ার পর, আর কখনও
ডিসেম্বরে শহরের পথ ভিজে যায় নি বৃষ্টিতে

তবু জানি, আজও অন্তরালে
ছাতিমের ’পরে নু’য়ে থাকে শীতকাল
 

কাকের গায়ে বসন্ত

আজ ক’দিন সূর্যটা আড়াল হলেই বাতাস আর শিশিরে সন্ধিক্ষণ শুরু হল বলে মনে হয়। ধূপগন্ধ পাচ্ছি কেবল। শাদা-শাদা কাশফুলের দোল দেখে তোমার চুল ভাবি। কতদিন তোমার চুল বেয়ে শিশির ঝরতে দেখি নি, বকুল! শিউলিবনে শাদার কেন্দ্রে হলুদ দেখে একবার ভ্যান গঘ বলে ডেকেছিলাম। তারপর দু’চোখের শ্রাবণ যাপন-শেষে কখনও হলুদ কুড়াই নি। একদিন কাকের গায়ে ওই রঙ দিয়েই বসন্ত এঁকেছিলাম কি-না...। বসন্ত, বর্ষা, শীত সবই পালাক্রমে এসে চলে যায়। পূর্ণিমা, অমাবস্যা মেনে আগামী দিনেও তা-ই যাবে। প্রকৃতি সত্যের মতো ঈশ্বর জানার পর, তুমিই জানো, আমি বকুল-অভিসারে ঘ্রাণ কুড়াই নি, তবু কেন শীত ঋতুতে আমার চারপাশের হাওয়া বকুল-বকুল গন্ধে ভরে যায়!
 
 

বই : বকুলের পাপড়িতে ছাতিমের ঘ্রাণ
কবি: তৃণলতা কুরচি
ধরন: কবিতাগ্রন্থ
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত
প্রকাশন: বৈভব
প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০২৫
মূল্য: ২১০টাকা
আই এস বি এন:
978-984-99283-3-1

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ