নতুন স্পর্শের গল্প
স্পর্শের বাইরের স্পর্শ গুনে-গুনে কাটিয়েছি
তিন তিন বছর স্পর্শের বাইরের স্পর্শগুলোকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে
টাইডাই করে গড়েছি নতুন স্পর্শ, সাজিয়ে গুছিয়ে পরিধান করেছি অঙ্গে। পাথর স্পর্শগুলোকে ভাস্কর্য করে রেখেছি
মসজিদ-মন্দির-গির্জায় এই তিন তিন বছর পৃথিবী ইতিহাসের পৃষ্ঠা
উল্টাতে চাইলে আমি চিবিয়ে চিবিয়ে ছিবড়ে রক্তাক্ত করেছি
স্পর্শের বাইরের স্পর্শকে! ওরা হাত ধরাধরি করে আমাকে ঘিরে
দাঁড়িয়ে বলেছে, আর কত?
এবার ছেড়ে দাও! তুমিও গড়ো
নতুন স্পর্শের ইতিহাস। হৃদয় ভাঙার শব্দেরা উঁকি দিতে চাইলে
কান্নারা মুচকি হেসে বলেছে—রক্তাক্ত ছিবড়েগুলোকে ভাসিয়ে
দাও করতোয়ার জলে। শুনে আমি হেসেছি, বলেছি—ওগুলো দিয়ে আমি আমার বৃদ্ধাশ্রমের ঘর সাজাবো। আর তখন তাকে বানিয়ে বানিয়ে শোনাব নতুন কোনো স্পর্শের গল্প! ছন্দ
আটপৌঢ়
আকাশের গায়ে গায়ে রোদ-ছায়া মায়া নৌকায় দিক-দিগন্তের রস পানে ছোটে উচ্ছল সাদা মেঘের দল। উদাসীন নারীমন সেদিক পানে চেয়ে হাহাকার করে ওঠে, তারও ওড়ার কথা ছিল ঐ আকাশে! মনসীমা ছাড়িয়ে হারিয়ে যাবার কথা ছিল মেঘের ভেলায়... অশান্ত শেকল আটা মন নিয়ে সে মনপিঞ্জিরার দরজার খিল তুলে ভেলা হয়ে যায়। পাড়ে পড়ে থাকে অপূর্ণ কতক চাওয়া, কতক চাওয়া হারিয়ে যায় না পাওয়াদের ভিড়ে! সে কেবল অন্যের পারাপারের ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে দোলে... নস্টালজিয়া রঙে
আলতো স্পর্শে জানালার গ্লাস সরিয়ে আলো- বাতাসের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাই; নস্টালজিয়া রঙে চারপাশ রঙিন হলে হাত বাড়াই, বৃষ্টি
এসে হাত ধরে গান গায় ছন্দে ছন্দে সুরে সুরে আমি সে গানের ছন্দে- সুরে ভীষণ কাতর হয়ে তোমার নাম জপি! তুমি কদমের ঘ্রাণ এনে আমাকে রাঙাও ; আমিও
সরব হই- রঙের আশকারায় কাঁপি, দহনে পুড়ি... তুমি জানো বা না জানো সে কথা জানে আমার ঘরের বিরহী পদ্মফুল, ঘুলঘুলির চড়ুই, আমার সাজআয়না, ঘরের
পাশের গাছ, সরানো পর্দা, কার্নিশের
ওই শ্যাওলা... আমাকে জলাঞ্জলি দাও
ভালোবাসি ভালোবাসি বলে এতো যে সুর তুলেছ, গান গেয়েছ কী দাম থাকল তাতে? এখন যে অস্বীকারের ঘুঙুর বেঁধেছ বাজিয়ে চলেছ তাই অবিরাম জলসাঘরে কী আনন্দ বলতে পার তাতে? বুঝিনা কী সুখ পাও রঙ বদলের ভাঙাভাঙির এ খেলায়! আমি তো খুঁজি জলের ওই স্রোত যে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে আমার বকুল মালা আমি তো খুঁজি ওই ফেনারাশি বুদবুদ যে শৈশবের জলখেলার কাঠি লুকিয়ে রেখেছে কোথায় সেসব বলতে পারো? তাতানো উষ্ণতা-ভেজা বাতাস-জলীয় বাষ্পে মেঘে মেঘে-বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে-রঙধনু রঙে নাকি পাহাড়ী ঝিরিপথে আলপনা ছন্দে আমাকে এনে দাও সে হারানো প্রত্যয়ী রুধিফুল! নইলে আমি জল হই আমাকে জলাঞ্জলি দাও! পরিচিতি কবি কামরুন নাহার কুহেলীর জন্ম ১২ ডিসেম্বর, দিনাজপুর মিশন হাসপাতালে। মুক্তিযোদ্ধা বাবার চাকুরিসূত্রে
শৈশবেই বগুড়াতে আগমন। করতোয়ার জলে বেড়ে ওঠা। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে
মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন। গান শোনা, বই
পড়া, ভ্রমণ কবির শখ। তার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ
‘ঘুলঘুলির আলোয় আঁকা পথ’ ।
|
0 মন্তব্যসমূহ