সাম্প্রতিক প্রকাশিত

10/recent/ticker-posts

কবি সাফওয়ান আমিন —এর পাঁচটি কবিতা

 

সাফওয়ান আমিন

ভয়

তুমি চলে গেলে গ্রামকে গ্রাম শূন্য করে যাওয়া
মহামারির মতো
সেই শূন্যতায় স্টেশন ছেড়ে গেল ট্রেন
যেন সহস্র গল্পের আকুতি নিয়ে...
 
বিপ্লবে তছনছ হয়ে যাওয়া পুরোনো প্রথার মতো
তুমি অগত্যা চলে গেলে
চলে গেলে মৃত্যুর মতো পলকা জীবনকে রেখে
যেন হরিণ ছাবককে তুলে নিলো চিতা
 
সেই থেকে বিপ্লবে বিপ্লবে প্রতিবিপ্লবের ভয়ে বাঁচি!
 

মূর্ছা

চূড়ান্ত ঘৃণা পেরিয়ে, বারবার
তোমার কাছে গিয়েছি
ফুলের গুরুত্ব বুঝতে না পারা
মানুষের মতো
তুমি যতবার আরক্ত গোলাপ
পিষে পিষে গেছো
আমি ততবার তোমার পায়ের নিচে
পিষে পিষে গেছি
যেন চিতার আঘাতে হরিণের বুক
খুঁটে খুঁটে জেনে গেল বিরহ অসুখ
 

ভাঙন

নৌকা চলে যাচ্ছে। শ্যালো মেশিনের শব্দ
দূরে গিয়ে শোনাচ্ছে কোথাও আগমনি গান
পতনমুখী সূর্যের পথ ধরে চলে যাচ্ছে
কারো আঁচল যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে জল
জলের সূর্যটি তখন ব্যর্থ কারো ফুল
বেতালে ভাসছে
ওই তো ঢেউয়ে ঢেউয়ে নৌকা চলে যাচ্ছে
 
আর আমি অসহায়
এ-নদীর পাড়, কাঁপছি ভাঙন ভয়ে...
 
 
আমার এ-যাওয়া তবু যাওয়া পর্যন্ত পৌঁছায় না

পালক পিছনে পড়ে গেলে
পাখিদের বিষণ্নতা আসে কিনা
জানি না! তয় তুমি শূন্যতায়
অন্ধকার লাগে, যেন আসেনি আলো
গত কয়েকশ বচ্ছর ধরে, আমার সীমানায়
 
রাস্তার পিচের মতো
কালো কালো এই শূন্যতা।
এর তীক্ষ্ণ বেদন রোদনকে
উতরে যায় প্রায়ই, যেন হৃদয়
কুড়ালের কোপে কাঠের মতো
দু'ভাগ হয়ে যায়,
এফোড়-ওফোড় করে যায়
নকশীকাঁথার সুঁইয়ের মতো
 
আত্মঘাতী ফুল কি কারো আত্মীয় হয়?
 
গাছের পাতার মতো নিত্য উড়ে উড়ে
পতনের সাক্ষী হতে যাই।
আমার এ-যাওয়া তবু
শূন্যতা ভেদ করে যাওয়া পর্যন্ত পৌঁছায় না...
 
 
সন্দেশ

বাজারে গেলেই বাবা
প্রতিদিন কী কী যেন আনে
এনে গুছিয়ে গাছিয়ে
শুমরে রাখে যত্নে-গোপনে
হয়তো কোনো সদাইয়ের পলিথিন;
খুরমা-জিলাপি
আনে তো দেয় না কেন?
একমাত্র পুত্র আমি।
তো দেবে না কেন?
ওরা কি গোপনে খায়, চুপিচাপি?
হয়তো অনেক মজা,
হয়তো অনেক বেশি দামি!
 
বাগানের মাঝে এক
বছর কুড়ির কদমের গাছ আছে।
বাবা পরিচর্যা করে রোজ,
যেন সময় ডিঙিয়ে আসে
পরিচর্যা তার এমন যে,
যেন বাগান করেছে তিনি
কেবল মধ্যবয়সী ঐ
শিউলি গাছটা তীব্র ভালোবেসে।
পরের বাসি সকালে,
আনা সে প্যাকেট খুলে খুলে
ঢালে শিউলির তলে,
বুলিয়ে আদরে পরম আঙুলে।
আমাকে দেয় না কেন?
এমন কেন বুঝি না আমি
লোকে নাকি তাকে
পুত্র শোকের পাগল বলে?
কীভাবে কী? আমিই তো পুত্র।’
এ আক্ষেপ শুনে, দুঃখে
পাখির ভাষার মতো সুর তোলে দাদি,
তাঁর দাঁতহীন মুখে
বুঝেছি তাতে, ভাই আমার সন্দেশ পছন্দ করে
ঘুমিয়ে আছে নিঠুর
, শিউলি ফুলের তল জুড়ে!

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ