সাম্প্রতিক প্রকাশিত

10/recent/ticker-posts

হরপ্পা সভ্যতা ও আর্য আক্রমণের মিথ → অনুবাদ: তানভীর হোসেন

                        তানভীর হোসেন


 হরপ্পা সভ্যতা ও আর্য আক্রমণের মিথ

কিছুকাল আগ অব্দিও হরপ্পা সভ্যতা আমাদের কাছে ছিল প্রহেলিকার আরেক নাম। এর কারিগরদের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে আজও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। ইরান সীমান্ত থেকে পূর্ব উত্তর প্রদেশ এমনকি গোদাভেরি উপত্যকার মতো সুদূর দক্ষিণের এলাকা অব্দি প্রায় ১০.৫ লক্ষ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই সভ্যতাটি ছিল প্রাচীন মেসোপটেমীয় ও মিশরীয় সভ্যতার সম্মলিত আয়তনের চেয়েও বৃহৎ। তবে যা সবচেয়ে গোলমেলে বিষয় তা হল এই প্রকান্ড সভ্যতার আকস্মিক পতন বা লাপাত্তা হয়ে যাওয়াটা।

প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক এস.আর রাও যিনি সম্ভবত হরপ্পান প্রত্নতত্ত্বের সর্বাগ্রবর্তী কর্তৃপক্ষের একজন সাম্প্রতিকতম সময়ে লিখেছেন "খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ সালের দিকে সবচেয়ে পূর্ণবয়স্ক হরপ্পান এলাকাগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে শুরু করলে এর অধিবাসীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নতুন বাসযোগ্য ভূমির খোঁজে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাগরের পূর্বদিকে এরপরে তারা যমুনা অববাহিকার দিকে চলে যায়। মোহেঞ্জোদারো এবং সিন্ধুর দক্ষিণভাগের রিফিউজিরা সৌরাষ্ট্রের দিকে চলে যায় এবং পরে উপদ্বীপটির ভেতর অব্দি ছড়িয়ে পড়ে।"

এখান থেকে আপাতদৃষ্টিতে বলা যায় হরপ্পানরা কোন আকস্মিক দুর্যোগের শিকার হয়ে প্রাচীন ভারতের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল ইতিহাসের পাতায় যার প্রচলিত একটা ব্যখ্যা হল হরপ্পানরা বহিরাগত আর্যদের দ্বারা তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। যদিও পন্ডিতদের কাছে এটা এখন পরিষ্কার যে ভারতে আর্য আক্রমণের থিওরি একটা মিথ যা মূলত পশ্চিমা রাজনীতির ফসল এবং এর সাথে ভারতীয় উপাত্ত বা প্রত্নতত্ত্বের কোন সাযুজ্য তো নেই ই, এই আক্রমণের বিরুদ্ধে তথ্য প্রামাণাদি বরং অনেক বেশি অকাট্য।

প্রথমত হাজার মাইলব্যাপী বিস্তৃত এই বিশাল সভ্যতা নিশ্চয়ই ক্রমান্বয়ে কোন যাযাবর গোষ্ঠীর আকস্মিক আক্রমণে হুট করে পরিত্যক্ত হয়ে পড়তে পারে না নিমিষেই! এছাড়া বলির জন্য নির্মিত পূজাবেদীর মতো বিস্তর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রমাণ করে যে হরপ্পানরা ছিল বৈদিক আর্য সম্প্রদায়েরই অংশ। তাই বলা যায় বৈদিক যুগ মূলত হরপ্পা সভ্যতার সমাপ্তির সাথেই শেষ হয়ে যায়।

সবকিছু সাপেক্ষে তাই এটা পরিষ্কার যে, এই স্থানগুলো নিশ্চয়ই কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কোন কোন পন্ডিত এই ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে বন্যার কথা বললেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি কারণ বন্যা একটা বিশাল সভ্যতার পতনের কারণ হিসেবে খুবই নগণ্য। বন্যার সাথে লোকে মানিয়ে নেয়। বন্যায় লোকের মৃত্যু হলেও তা জীবনদায়ীও বটে। পৃথিবীর সবচেয়ে বন্যাসঙ্কুল এলাকাগুলো যেমন নীল অববাহিকা, বাংলাদেশ, চীনের ইয়াংসে অববাহিকা ইত্যাদি আবার অপরদিকে সবচে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলির মধ্যেও অন্যতম। আসলে বিশুষ্কীকরণ বা জলাভাবই ছিল হরপ্পান সভ্যতার বিলুপ্তির প্রধান কারণ। এ প্রসঙ্গে দুটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্যাটেলাইট কেন্দ্রিক গবেষণাকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। যারা আমাদের জানিয়েছে মূলত ঠিক এরকম একটি ঘটনাই ঘটেছিল তখনকার হরপ্পাতে। বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত পরিবর্তনই ছিল বিখ্যাত এই ভারতীয় সভ্যতাসহ মেসোপটেমীয় মিশরীয় এজিয়ান সভ্যতাগুলোর ধ্বংসের নেপথ্য কারিগর।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ. ভাইজ এর নেতৃত্বে উত্তর মেসোপটেমীয়ায় পরিচালিত ফ্রেঞ্চ-আমেরিকান যৌথ এক্সপ্লোরেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বলা যায় যে অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতাগুলোই একটা প্রচন্ড খরার শিকার হয়েছিল যা খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ সালে শুরু হয়ে প্রায় ৩০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং যা প্রতিবেশী ভারতীয় এক্কাডিয়ান সভ্যতার তীব্র ও আকস্মিক ক্ষতিসাধন করেছিল। এ খরা হয়তোবা অগ্ল্যুৎপাতের কারণে ঘটেছিল। এ বিষয়ে ঐতিহাসিক এই এক্সপ্লোরেশনের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে— " খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ সালের দিকে উত্তর মেসোপটেমীয় অঞ্চলে প্রচন্ড খরার দরুণ বিশাল এলাকা আকস্মিকভাবেই জনশূন্য হতে শুরু করে। বায়ু সংবহনতন্ত্রের পট পরিবর্তন অগ্ল্যুৎপাত প্রভৃতি জলবায়ু বিষয়ক পরিবর্তন বাসযোগ্য ভূমির সংকট তৈরি করলে উত্তর, দক্ষিণ মেসোপটেমীয় এক্কাডিয়ান সভ্যতার সাথে মিল রেখে এর সংলগ্ন অন্যান্য সভ্যতাগুলোও ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে।"

এস.আর রাও এর মতে ঠিক এই জলবায়ু পরিবর্তনই ভারতের প্রাচীন সভ্যতাকেও আঘাত করেছিল ওই সময়ই। ওই খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সাল বা তার কাছাকাছি সময়েই। এবং তা রেডিওকেশন ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ডেটিং পদ্ধতির ত্রুটি বিচ্যুতি মাথায় রেখেই নির্ণীত।

দক্ষিণ ইউরোপ থেকে ভারত এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বেশ কয়েকটি স্বাধীন এক্সপ্লোরেশন থেকে জানা গেছে যে ওই সময়টিতে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাচীন সভ্যতা গুলোর প্রায় প্রতিটিরই সমাপ্তি ঘটেছিল। এ সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের সামনে দাঁড়িয়ে আর্যদের আক্রণের বিষয়টিকে তাই স্রেফ অতিকথন বৈ আর কিছুই মনে হয় না। এই আবিষ্কারগুলো হরপ্পা সভ্যতার বিনাশকারী হিসেবে আর্যদের চিহ্নিত করার ধারণাটিকে ভুল প্রমাণে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কিছুদিন আগেই প্রমাণিত হয়েছে যে বৈদিক সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতারই পূর্বপুরুষ এবং হরপ্পার পতনের সাথেই এরও সমাপ্তি ঘটেছিল। আসলে হরপ্পাই ছিল বৈদিক সভ্যতার সর্বশেষ আলোকচ্ছটা। এই আবিষ্কার হরপ্পানদের শেকড় সম্পর্কিত অনেক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করে। যেহেতু সাম্প্রতিকতম সময়ের আবিষ্কার বলছে যে হরপ্পা মূলত বৈদিক যুগেরই সর্বশেষ রূপ তাই তাদেরকে বলা যেতে বৈদিক হরপ্পা এবং সময়টিকে বলা যায় ঋগ্বেদের যুগ। কেন? তার উত্তর সাম্প্রতিকতম সময়ে বৈদিক ভারতের গণিতশাস্ত্র ও ভূগোলবিদ্যা সংক্রান্ত আবিষ্কার দেখলেই পাওয়া যাবে।

হরপ্পা সভ্যতায় নগর পরিকল্পনা, পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালী, পানি সাপ্লাই ইত্যাদি বিষয়ে যে উৎকর্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায় তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে তাদের ছিল জ্ঞানী ও কুশলী স্থাপত্যবিদ ও গণিতবিদ। হরপ্পার সমমানের নগরপরিকল্পনা ও প্রকৌশল দেখতে পৃথিবীর মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ২০০০ বছর। তাহলে প্রশ্ন ওঠে হরপ্পানরা এই জ্ঞান পেলো কোথা হতে? অনেকে বলেন নিশ্চয়ই তারা গ্রিকদের কাছ থেকে এসব শিখেছিল। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই উদ্ভট। কারণ উন্নতির এমন শিখরে পৌঁছাতে হলে হরপ্পানদের গ্রিকদের চেয়ে কমপক্ষে ২০০০বছর আগেই জ্ঞানের সেই স্তরে পা রাখতে হয়েছিল এবং মোদ্দাকথা হল তা না হলে সভ্যতা কখনই হয়তো আলোর মুখ দেখতো না। কিন্তু যখনই আমরা হরপ্পাকে বৈদিক হরপ্পা ধরে নিচ্ছি তখনই তাদের জ্ঞানের এই উৎকর্ষতার রহস্য খোলাসা হয়ে যাচ্ছে। কারণ শেষদিকের বৈদিক সাহিত্যে সুলবা সূত্র নামে একটা গাণিতিক টেক্সট পাওয়া গেছে যাতে সুনির্মিত পুজাবেদীগুলোর নির্মাণকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। সুদীর্ঘ প্রায় কুড়ি বছরের গবেষণা শেষে প্রখ্যাত মার্কিন গণিতবিদ ও বিজ্ঞান বিষয়ক ঐতিহাসিক আব্রাহাম সিডেনবার্গ দেখিয়েছেন যে সুলবা সূত্র মিশরীয় ও প্রাচীন ব্যাবিলনিয় গণিতশাস্ত্রেরও মূল ভিত্তি ছিল। সুলবা সূত্রের উপর ভিত্তি করে রচিত মিশরীয় টেক্সটগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ বছরেরও আগের তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ভারতীয় গাণিতিক জ্ঞানের অবতারণা ঘটেছিল তারও বহু আগে আর তা হল হরপ্পা সভ্যতার চরম শিখরে থাকার সময়েই।

সুলবা সূত্রসার হল বৈদিক ধর্মীয় সাহিত্যকর্ম কল্পসূত্রের একটা অংশ। এটা তৈরি করা হয়েছিল বৈদিক পূজাবেদীগুলোর ডিজাইন ও নির্মাণে টেকনিক্যাল ম্যানুয়াল হিসেবে ব্যবহার করবার জন্য। আগেই বলা হয়েছে হরপ্পাতে বহু পূজাবেদী পাওয়া গেছে। তো একথা পরিষ্কার যে বৈদিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত এই গণিতশাস্ত্র ও হরপ্পাতে পাওয়া পূজাবেদীগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। আর এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এসব নির্মাণকৌশল বহিরাগত বা কোন অনুপ্রবেশকারী গোষ্ঠীর কাছ থেকে পাওয়া নয় বরং হরপ্পানদের নিজেদেরই যা তারা তাদের পূর্বপুরুষদের বৈদিক গণিতশাস্ত্র থেকেই পেয়েছিল। সুলবা সূত্র এখনও অব্দি পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন গাণিতিক টেক্সট। আব্রাহাম সিডেনবার্গ বলেন— "... মিশরীয় ও প্রাচীন ব্যাবিলনীয় জ্যামিতির উপাদানগুলোর উৎস সন্ধান করলে দেখা যায় এগুলোর পদ্ধতি সুলবা সূত্রে প্রাপ্ত পদ্ধতির মতোই।"

তাই বলা যায় বৈদিক ধর্মীয় সাহিত্যের অংশ হলেও সুলবা সূত্র মূলত বৈদিক ধর্মেরই একটা সেকুলার উপহার। ঠিক যেমন প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ একটা ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ বাইবেল হলেও গুটেনবার্গ প্রিন্টিং ছিল মূলত ইউরোপীয় রেঁনেসার প্রথম ধাপ। ঠিক একইভাবে প্রাচীন বৈদিকরা প্রথমে পূজাবেদী নির্মাণেচ্ছা থেকে সুলবা সূত্র প্রণয়ন করলেও পরবর্তীকালে তাদের উত্তরসূরি বৈদিক হরপ্পানরা একে উন্নত নগরায়ন ও জলাধার নির্মাণসহ আরও অভূতপূর্ব কাঠামো নির্মাণে কাজে লাগিয়েছিল। তাহলে বলা যাচ্ছে যে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছরেরও আগে হরপ্পা সভ্যতার সাথেই বৈদিক যুগের অবসান ঘটেছিল মহা খরার কারণে। কিন্তু এই অবসান প্রক্রিয়ার শুরুটা ঠিক কখন হয়েছিল তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে বৈদিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক বোদ্ধার মতে ঋগ্বেদের কিছু রেফারেন্স থেকে বলা যায় যে এটা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৬৫০০ বছর আগে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর কোন কোনটির ডেটিং হতে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ বছরের আগেরও নিদর্শন পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও সহায়ক উপাত্তের প্রয়োজন আছে। আর ঠিক এই ব্যাপারেই ধন্যবাদ জানাতে হয় ফ্রেঞ্চ SPOT স্যাটেলাইট এবং ইন্দো-ফ্রেঞ্চ ফিল্ড গবেষণাকে। আমরা জানতে পেরেছি যে ঋগ্বেদে উত্তর ভারতের ভূ-ভাগের যে বর্ণনা তা মূলত খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগের সময়কালের। আর এটার প্রমাণ হল সরস্বতী নদীর পরিণতি।

ঋগ্বেদ অনুযায়ী পবিত্রতম নদী গঙ্গা নয় সরস্বতী। এর অন্তত ৫০ টি জায়গায় বর্তমানের মৃত সরস্বতীর কথা বলা হয়েছে যেখানে গঙ্গার কথা রয়েছে মোটে ১ বার। ড. ওয়াকংকর বিস্তর গবেষণা করে জানিয়েছেন বেশ কয়েকবার দিক পরিবর্তন করে খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ সালের দিকে সরস্বতী পুরোপুরিভাবে শুকিয়ে যায়। কিন্তু কিছুকাল আগে স্যাটেলাইট গবেষণা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যা ওয়াকাংকার জেনে যেতে পারেননি যে ঋগ্বেদের সরস্বতী খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছরেরও অনেক আগে থেকেই বারোমেসে নদী হিসেবে টিকে থাকা বন্ধ করে দিয়েছিল।

ইন্দো-ফ্রেঞ্চ এক্সপ্লোরেশনের পল হেনরি ফ্রাঙ্কফুর্ট বলেন— "প্রোটোহিস্টোরিক সময় অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালের দিক থেকেই অর্থাৎ আদি হরপ্পানদের এখানে বসবাস শুরুর বেশ আগে থেকেই এখানে তেমন কোন বড় স্রোতস্বিনীর অস্তিত্ব ছিল না।" কিন্তু স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুযায়ী এ অঞ্চলে প্রিহিস্টোরিক সময়ে মানে আদি হরপ্পানদেরও অনেক অনেক অনেক কাল আগে প্রায় সাত কিমি চওড়া নদী ছিল আর এটাই হল ঋগ্বেদে উল্লিখিত সেই মহানদী সরস্বতী। আর এতে করে এটাও প্রমাণিত হল যে ঋগ্বেদ আমাদের খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগের সময়কার ভারতের ভূগোল জানায়। আর সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে কমপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ বছর আগে থেকেই ঋগ্বেদের অস্তিত্ব ছিল। তাহলে এতোসব তথ্য আলোচনা হতে কী সাব্যস্ত হয়? যা হয় তা হল ঋগ্বেদ হয়তোবা মিশরীয় মেসোপটেমীয় এমনকি হরপ্পানদেরও আগের কোন এক সভ্যতার ধারক। যা কিনা আমাদের এতোদিন ধরে সভ্যতার সূতিকাগার হিসেবে চেনা মিশরীয় সভ্যতা সম্বন্ধে আমাদের জানাকে ভুল প্রমাণ করে। এও বলা যায় ঋগ্বেদিক আর্যরা শেষ বরফ যুগের সময় সংঘটিত বরফ গলনের সুবিধা স্বরূপ পেয়েছিল উত্তর ভারতের এক বিশাল ভূখন্ড। শেষ বরফ যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ বছর আগে। তারপর বেশ কয়েক হাজার বছর যাব এখন উত্তর ভারতের যে জায়গাগুলো ঊষর বন্ধ্যা যেমন রাজস্থান, সিন্ধু, বেলুচিস্তান এরা ছিল সজীব সুজলা সুফলা। যাদের এহেন প্রাণবন্ত চেহারার নেপথ্যে ছিল সেই বরফ গলনের ফলে সৃষ্ট ঝর্ণার জল। আর এই ঝর্ণাগুলোই যখন ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে গেল তখন অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ সালের দিকে প্রচন্ড খরার সাথে পতন ঘটলো এতোদিনে তিল তিল করে গড়ে ওঠা পৃথিবীর এখনও অব্দি সবচেয়ে পুরনো সভ্যতার।

হরপ্পা সভ্যতা ও আর্য আক্রমণের মিথ
মূল: ড. এন. এস রাজারাম
প্রকাশ: হিন্দুস্থান টাইমস
অনুবাদ: তানভীর হোসেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ