সাম্প্রতিক প্রকাশিত

10/recent/ticker-posts

কবি শিবলী মোকতাদির —এর ৫টি কবিতা

‣শিবলী মোকতাদির

তাহিরপুর
 
মুক্ত হল বন্দিদশা
উড়ে গেল পায়রাগুলো
আধেক ফেটে যেমন ঝরে
শিমুল তোমার শীর্ণ তুলো।
 
নাতিদীর্ঘ হৃদয় গ’লে
ঘ্রাণ পাঠালে ব্যস্ত বনে
আমার হাতে তোমার ব্যথা
পাশ ফিরেছি অবন্ধনে।
 
বসন্তে হয় ক্লান্তিবোধ
রক্তকমল ফুটছে ভয়ে
স্মৃতির কাছে যুক্তি এসে
বুক পেতে দেয় বাঙ্ময়ে।
 
পূর্ণিমা আজ গভীরতম
প্রেম করিবার বাঞ্ছা দিয়ো
চোখের মণি পাথর করে
দিতেই পারি অঙ্গুরীয়।
 
যুক্তি ভুলে যুদ্ধ করো
শিল্প বানাও পোড়ামাটি
সায়াহ্নে এই চোখের কাছে
দৃষ্টি তোমার অধিক খাঁটি।
 
বৃত্ত ভেঙে রেখায় চলো
টিপ হারালে কী আর ভয়
তুলির টানে তাহিরপুরে
শিমুল ভরা চন্দ্রোদয়।
 
 
কবিতার জন্য
 
যে মানুষ তৈরি হল তার জন্য পথ আঁকি এসো
উপকণ্ঠে ধাপে ধাপে রাখি
উপক্রম, উপহার, উপবন
 এইটুকু আপাতত।

 
দিন শেষে বিনাশের সূর্য মিশে যাবে
শিষ্যের গৃহ পদে-পদে সমাসবদ্ধ
আঁধারমাতৃক দেশে কালোজ্বলা আলো
সাথে তার পাঠিনী দাও ভালো।
 
ভেজা পায়ে কিছুটা চলুক
পিচ্ছিল পঙ্ক্তিতে বাজালে নূপুর
শালীনতা রেখে অজুহাত দিয়ো
 
ভূতগ্রস্ত নয়, কবিতার জন্য
এনার্জি জিনিসটা বড়ই লোভনীয়!
 
 
দৃষ্টিবাবা
 
পালিয়েছে অবৈধ প্রেমিক-প্রেমিকা
তাই নিয়ে গ্রাম ঘুরে লক্ষ্যভেদী আলোচনা।
 
সংগ্রামী জীবন ছেড়ে সাধুর শয্যায় সূর্যাভিমুখে
ঝাঁকে ঝাঁকে সম্ভব-অসম্ভবের বয়ান ঝাড়ছেন দৃষ্টিবাবা
 
অন্ধকারে ফোটা ফুলের মতো তাজ্জব হয়ে শুনছে,
সহজাত ঋণ স্বীকারে উতলে ওঠা সম্ভ্রমে সকল প্রেমপাপী
 
সড়ক, আকাশ নয় তারা গেছে নদীপথে
আমুদরিয়া টপকে এখন আমাজনের পথে
প্রযুক্তি-আক্রান্ত হাসির আস্ফালনে নৌকাটা হেলছে, দুলছে
 
কুমিরে কাটবে না,
যে-গাছে হামলাবাজ বিষপিঁপড়ের আনাগোনা
বেঁধে রাখা হবে, মরণকামড়ের জ্বালা, প্রেমার্তচিৎকার
ক্যামোফ্লেজে মিশে থাকা সব জন্তুজানোয়ার দেখতে পাবে,
মানুষ পাবে না।
 
কোনো সভ্যতা, কোনো বিশল্যকরণী
পরিত্যক্ত প্রেমের দায়ভার নেবে না।
 
রোমাঞ্চ
 
স্মরণযোগ্য স্বপ্নের কথা শুনে
ধারদেনা করে সেই যে ঢুকলে মহাভারতে
আমি বলিরাধার কী হল?
 
এত এত বাঁশির ব্যাকরণ লিখে
তালাবদ্ধ গেটে রোজ দাঁড়িয়ে থাকি
প্লাকার্ডে লেখা‘আমার শ্রীমতিকে দিয়ো।’
 
রেকর্ড চুরমার করে নীরবতার নৈহার চলে
 
সঞ্চিত অট্টহাসি কানে কানে বলে
ওইদিকে যান, তটরেখা ধরে নিয়তিঘন চিত্রকল্প
মূল থেকে ভস্মমুখ লিখছেন আর কাটছেন
বেদনার উৎস ও উপশমের সংরক্ত লিপিকার।
 
মতিগতি
 
বনফোটা বিমূর্ত ফুল একটানে এঁকে
শিল্পী হয়ে অবসাদে ভুগি।
 
আজ বাতাস বইছে উৎসর্গকৃত, বিচিত্র প্রাদেশিক
কিছু পাখি কণ্ঠের সুরাহা করতে না পেরে
প্রান্তিক পাতার আড়ালে
গান গাইছে ফিকশনের আঙ্গিকে।
মঞ্চবাহিত থোকা থোকা বক্তা
বকে যাচ্ছে ঘোষণার বিপরীতে।
 
যুক্তিজালের তোয়াক্কা না করে
কাঁচের টানেলে গতির গাত্রদাহ করে
ছুটে যাচ্ছে ইনভিজিবল ট্রেন।
 
উত্থানকে সুস্নাত রাখতে
তোমার মুখের লাবণ্য ব্যক্তিসীমা পার হয়ে
সত্তার সমুদ্রে মিশে যাক।
 
গল্প ভুলে মর্মের নিকটে এসে অস্থিরতাটুকু থাক!
 
 
পরিচিতি 
 
শিবলী মোকতাদির
         কবি, প্রাবন্ধিক
জন্ম : ১১ জুন ১৯৬৯ বগুড়া, বাংলাদেশ
 
 
প্রকাশিত গ্রন্থ :
 
ধানের রচনা দিলে পত্রে (কাব্যগ্রন্থ)
ছন্দের নান্দনিক পাঠ (প্রবন্ধগ্রন্থ)
নিষিদ্ধ পুষ্টির কোলাহল (কাব্যগ্রন্থ )
সোনার কার্তুজ (কাব্যগ্রন্থ )
রৌদ্রবঞ্চিত লোক (মুক্তগদ্য)
ব্যবহারিক বিস্ময় (কাব্যগ্রন্থ)
দুর্ভিক্ষের রাতে (কাব্যগ্রন্থ)
কায়া ও কৌতুকী (কাব্যগ্রন্থ)
ছন্দকথা (প্রবন্ধগ্রন্থ)
চকে আঁকা চোখ (কাব্যগ্রন্থ)
বিনয়ী বাঁশির সুর (মুক্তগদ্য)
অনুতপ্ত আগুনের পাশে (কাব্যগ্রন্থ)
নিষিক্ত ফুলের অনুরাগ (কাব্যগ্রন্থ)
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ