সাম্প্রতিক প্রকাশিত

10/recent/ticker-posts

মাহমুদ কাওছার —এর কবিতা ও কবিতা ভাবনা

মাহমুদ কাওছার
বুনন করো নিজের প্রয়াস

যেন কত যুগ কেটে গেল
দাঁড়িয়ে আছো পথের ধারে
সারা গায়ে ক্ষত-বিক্ষত
শিউরে তোলা কাঁটা নিয়ে
বুকের ভিতর চাপা কষ্ট নিয়ে!
 
যেন বিন্দু বিন্দু রক্তকণা দিয়ে
রক্তের মতো লাল করে ফুটিয়েছ ফুল
 
কোনো এক বসন্তের বিকেলে
ঝরে যাবে সে ফুল!
তাহলে কী মুখ থুবড়ে পড়বে?
পথের ধুলোয়
গড়াগড়ি খাবে এই ধরণির পরে
নাকি স্বপ্ন দেখো!
স্বপ্ন আরও এগিয়ে যাবে
কুয়াশার মতো সাদা ধবধবে তুলো হয়ে
উড়তে চাও বাতাসের পরে
 
দিতে চাও ধরা স্বপ্ন বোনা তাঁতির হাতে
উঠতে চাও তাঁতির বউয়ের হাতে
ঘূর্ণায়মান চরকায়
তুমি কী হবে কারো শেষ যাত্রার
কাফনের শাড়ি?
নাকি বাসন্তী রঙে রাঙাতে চাও নিজেরে
হতে চাও নববধূর
লাল পড়ে সাদা শাড়ি
নাকি কলিতেই উঠতে চাও তাহার খোপায়!
 
 
কোনো রূপে তোমাকে মানো সখী

তিলোত্তমা, তোমার রূপ ও শরীরী গড়ন
পুরাই মাকাল ফলের মতন
যেন রমাদানের বুরিন্দা
চাপ দিতেই রসে টইটুম্বুর
ভিতরটা পুরো কালো
পচে গেছে, দুর্গন্ধ
খাবারের অযোগ্য
তবে কি গোলাপ হলে ভালো হতো?
তাও আবার গোলাপের কলি
ফুটন্ত নয় কিন্তু
গোলাপ কলি আফোটা হয়ে
উঠতে রমণীর খোপায়
যুবকের বুক পকেটে
যখনই ফুটবে পরিস্ফুট হয়ে
তোমার নিজের মতন করে
তখনি ঝরে ঝরে পড়বে
তোমার পাপড়ি
শুঁকিয়ে বিলীন হয়ে যাবে মাটির উপর...
 
 
জরায়ু খুলে ডাকছো

ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ
বেহেশত থেকে খসে খসে পড়ছে
উল্কাপিণ্ডের মতো
বাতাসের গায়ে গা মিশিয়ে
বেহেশতি ঘ্রাণ যেন দুনিয়ার বুকে
উল্লাস করছে, নৃত্য করছে বেহেশতি উর্বশী
ঝিনুকের বুক থেকে
খসে পড়া মুক্তার মতো
বুক থেকে খসে পড়ছে
নাভি কস্তুরীর ঘ্রাণ
সুভাস ছড়াও, করে দাও মাতোয়ারা
পিয়ালায় ঢালো প্রেম প্রেমো-রস
বারবার কাছে আসছো কামুকী নারীর মতো
জরায়ু খুলে ডাকছো, আপ্রেমিক রূপে
নিকোটিনের মতো মিশে যাচ্ছো
আমার রক্তে, দেহের ভিতরে
 
 
মৃত্যুর মতো মোহনীয়তায়

মৃত্যু করে পান অনন্তের পাত্র ভরে
অসুখ থেকে উঠে আসা
ব্যথিত বিহ্বল সেই
মুখ থেকে ঝরে মৃত্যুর মৃন্ময়
এই আরোগ্য আবাসে বাসা
বেধে আছে এত অসুস্থতা
ব্যালে কি মাথুর করিডোরে
দেখি পায়ে পায়ে পরেছে নূপুর
মর্মর ধ্বনি শুনি কতবার মৃত্যুর 
তবে কি মৃত্যুকে ভালোবাসি নিজ প্রাণের মতো?
ভালোবাসো তোমারও কখনো,
কখনো কখনো বড়ো একা লাগে
এই জগৎ মাঝে
মিথ্যা করে হলেও বলো ভালোবাসি
তবে কি জানো, 'কম খাবি তো বেশি খা'
আর 'বেশি খাবি তো কম খা'
গান বাজে মনে হয়, পরিচিত গান
প্রিয়হীন কান্না শুনে
সেই ব্যথিত বিহ্বল মৃত্যুর মৃন্ময়
মুখ থেকে ঝরে
যেন রেখেছে এখানে ক্যাসেট ভরে
আছে সারাক্ষণ ঠোঁটে লেগে গুনগুন
দিব্যি সেজেগুজে প্রাসাদের মুখে
 
 
সংসার

একটা সাপ পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বসে আছে
তার মাথায় চিন্তা ভিতর
আলোর কাছে অন্ধকারের
পরাজয় পরাজয় ভাব যখন, তখন ঘুম ভাঙে
 
উন্মাদ পাগল এক মানুষের মতো
প্রলাপ ছুড়তে ছুড়তে বেরিয়ে যায়
ঘর থেকে, মন থেকে বাজারের দিকে
যেন বিষণ্ন এক দুপুর, বিষণ্ন এক সন্ধ্যা পালাচ্ছে,
ছুটে যাচ্ছে অন্ধকারের কৃষ্ণত্বে...
কোনো মাছরাঙা যেন রকেটের ভঙ্গিতে উড়ে গেল!
 
কামনা ও বাসনা ও ক্ষুধার তাড়না যখন  মুখ্য হয়ে ওঠে,
শরীর আছে বলে, সে দোকানি করে!
যেন প্রতিটি চায়ের কাপ একেকটি গল্পের আকুতি,
কতগুলো হাসির ফোয়ারা, ঈর্ষার ইশারা ঝরে!
 
সূর্য যখন মাথা বরাবর আসে, ক্ষুধার কামনা বাড়ে
কামনা বাড়ে গর্ভকালীন যন্ত্রণা থেকে
মুক্তির বাসনার মতো
মুখস্থ হাতের স্পর্শ  খোঁজে চোখ!
 
ক্ষুধা নিবারণ হলে যেন মনে হয়
কোনো ফাঁসি কাষ্ঠে ঝোলানোর পূর্বে
আসামির শেষ ইচ্ছে পূরণ করা হলো
 
হিমালয় পর্বতে জমে থাকা বরফ যেমন
সূর্যের তাপে ঘাম হয়ে ঝরে পাহাড়ের
গা বেয়ে
তেমন করে তিনি চুল্লির সামনে
দাঁড়িয়ে ঝরে যেতে থাকে প্রতিটি চায়ের কাপে।
 
যুদ্ধ ফেরত পরাজিত সৈনিকের মতো
আশাহত হাজারো হতাশা নিয়ে
ঘরে ফেরে, ফিরতে হয় বলে সংসারে!
 

মাহমুদ কাওছার এর কবিতা ভাবনা
কবিতা অনেকটাই আসমানি কিতাবের ন্যায় ঈশ্বর প্রদত্ত দান। যাহা কবির মননে আসে এবং সুগভীর চিন্তা ভাবনার পর সুসজ্জিত ও অলংকৃত শব্দ বিন্যাস এবং কাব্যিক ছন্দ বিন্যস্ত কিছু বাক্যের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়। এটি অবশ্য আমার ধারণা
, তবে এতে কারও ভিন্ন মতো থাকতেই পারে এবং এটাই স্বাভাবিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ